সংক্ষেপে বঙ্গবন্ধুর জীবনী-শেখ মুজিব একটি জাতির রূপকার এবং স্বাধীনতার স্থপতি!

বঙ্গবন্ধুর জীবনী: শেখ মুজিব একটি জাতির রূপকার এবং স্বাধীনতার স্থপতি

বাংলাদেশের ইতিহাসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম এক অমর নাম। তিনি শুধু একটি রাজনৈতিক নেতা নন, বরং তিনি একজন জাতির রূপকার এবং স্বাধীনতার স্থপতি। ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন শেখ মুজিব। তার পুরো নাম শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি ছিলেন একজন রাজনৈতিক নেতা, মুক্তিযোদ্ধা এবং বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশ ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জন করে।

শৈশব এবং শিক্ষা জীবন

শেখ মুজিবুর রহমানের শৈশব কাটে একটি সাধারণ মুসলিম পরিবারে। তার বাবা শেখ লুৎফর রহমান ছিলেন একজন স্কুল শিক্ষক এবং মা সায়েরা খাতুন ছিলেন গৃহিণী। তিনি প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন টুঙ্গিপাড়ার একটি স্থানীয় বিদ্যালয়ে এবং পরে গোপালগঞ্জের গোপালগঞ্জ মডেল স্কুলে ভর্তি হন।

তিনি ১৯৪২ সালে কলকাতার ইসলামিয়া কলেজে ভর্তি হন এবং পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থানান্তরিত হন। এখানেই তার রাজনৈতিক জীবন শুরু হয়। ১৯৪৮ সালে তিনি মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন এবং তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসনের জন্য সংগ্রাম শুরু করেন।

রাজনৈতিক জীবনের সূচনা

শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর থেকেই রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৪৯ সালে তিনি আওয়ামী মুসলিম লীগে যোগদান করেন এবং পরে আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসেবে পরিচিত হন। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন এবং বাংলা ভাষার জন্য সংগ্রামে তার ভূমিকা ছিল অপরিসীম।

বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের উত্থান

শেখ মুজিবের রাজনৈতিক কার্যক্রমের ফলে আওয়ামী লীগ দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করে। ১৯৬৬ সালে তিনি “ছয় দফা” আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন, যা পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসনের দাবি নিয়ে আসে। এই আন্দোলন পাকিস্তান সরকারকে বিপর্যস্ত করে ফেলে এবং শেখ মুজিবকে জাতির পিতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে।

মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর ডাক দেয়ার মাধ্যমে স্বাধীনতার সংগ্রামের নেতৃত্ব দেন। ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী পূর্ব পাকিস্তানে নিরীহ মানুষদের উপর হামলা চালায়, যা পরে “অপারেশন সার্চলাইট” নামে পরিচিত হয়।

শেখ মুজিবুর রহমান তখন ধরা পড়েন এবং পাকিস্তানের কারাগারে বন্দী হন। তবে, বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের সংগ্রাম অব্যাহত থাকে এবং ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করে।

১৯৭২ সালে দেশে ফিরে আসা

স্বাধীনতার পর ১০ জানুয়ারি ১৯৭২ সালে শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে দেশে ফিরে আসেন। তিনি যখন দেশে ফিরে আসেন, তখন বাংলাদেশের পরিস্থিতি ছিল অত্যন্ত বিপর্যস্ত। দেশ গঠনের জন্য তিনি কঠোর পরিশ্রম শুরু করেন।

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী

শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি হন এবং পরবর্তীতে ১৯৭৩ সালে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ একটি নতুন রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যে কাজ শুরু করে।

উন্নয়ন পরিকল্পনা এবং সমাজকল্যাণ

বঙ্গবন্ধুর সরকারের প্রধান লক্ষ্য ছিল দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং সমাজকল্যাণ। তিনি কৃষি, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য খাতে ব্যাপক উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। তার নেতৃত্বে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বিপুল পরিবর্তন আসে।

১৫ আগস্ট ১৯৭৫: মৃত্যুর অধ্যায়

শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ যখন উন্নতির পথে এগিয়ে চলছিল, ঠিক তখনই ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ সালে একটি সেনাবাহিনী অভ্যুত্থান ঘটে। এই অভ্যুত্থানে শেখ মুজিব এবং তার পরিবারের অধিকাংশ সদস্য নিহত হন। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি কলঙ্কজনক অধ্যায়।

বঙ্গবন্ধুর অবদান

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। তিনি শুধু স্বাধীনতার স্থপতি নন, বরং তিনি একটি জাতির গর্ব ও আত্মবিশ্বাসের প্রতীক। তার দর্শন এবং আদর্শ আজও বাংলাদেশে মানুষের মনে জাগরণ সৃষ্টি করে।

উপসংহার

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন ও কর্ম আমাদের জন্য একটি অনুপ্রেরণা। তার সংগ্রাম, নেতৃত্ব ও আত্মত্যাগ আমাদেরকে স্বাধীনতার গুরুত্ব উপলব্ধি করতে সহায়তা করে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব এবং জাতীয় স্বার্থের জন্য তার অবদান অনস্বীকার্য। শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের জাতির পিতা এবং তার জীবন আমাদের জন্য চিরকাল অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *