শেখ রাসেলের শিক্ষা জীবন- দুরন্ত প্রাণবন্ত শেখ রাসেল!

শেখ রাসেলের শিক্ষা জীবন: দুরন্ত প্রাণবন্ত শেখ রাসেল!

শেখ রাসেল, বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেসা’র ছোট ছেলে। তিনি ১৯৬৪ সালের ১৮ অক্টোবর ঢাকা শহরে জন্মগ্রহণ করেন। রাসেল জন্মের পর থেকে একটি স্বাভাবিক ও সুখী জীবন যাপন করেন, কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালরাত্রিতে বঙ্গবন্ধু পরিবারকে হত্যা করার পর তাঁর জীবন থমকে যায়। রাসেলের শিক্ষা জীবন ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এটি তাঁর ব্যক্তিত্ব গঠনে বিশেষ ভূমিকা রেখেছিল।

প্রাথমিক শিক্ষা

শেখ রাসেলের প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয় ধানমণ্ডির শিশু মক্তব থেকে। সেখানে তিনি ইসলামের প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করেন এবং কোরআন পাঠের মাধ্যমে ধর্মীয় শিক্ষা লাভ করেন। প্রাথমিক শিক্ষা তাঁর মনে ধর্মীয় মূল্যবোধ ও নৈতিকতা গঠন করতে সাহায্য করেছে। শেখ রাসেল ছোটবেলা থেকেই ছিলেন অত্যন্ত চৌকস ও সৃজনশীল। তাঁর প্রাথমিক শিক্ষার সময় নানা খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করতেন, যা তাঁর মননশীলতা ও সৃজনশীলতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়েছিল।

মাধ্যমিক শিক্ষা

শেখ রাসেল পরে ভর্তি হন ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুলে। এখানেই তিনি তাঁর মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন। শেখ রাসেল অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র ছিলেন এবং তাঁর পাঠ্যবইয়ের প্রতি ছিল গভীর আগ্রহ। তাঁর শিক্ষকদের মধ্যে তিনি অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিলেন। রাসেল সহপাঠীদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করতে ভালোবাসতেন।

মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়াকালীন তিনি বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করতেন। তিনি গান, কবিতা ও নাটক নিয়ে ছিলেন অত্যন্ত আগ্রহী। এ সময়েই তিনি তাঁর মেধা ও সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটাতে সক্ষম হন। শেখ রাসেলের শিক্ষকরা তাঁর প্রতিভা ও গুণাবলীকে মূল্যায়ন করে বলেছিলেন, “তিনি ছিলেন এক অনন্য প্রতিভা।”

উচ্চ শিক্ষা

শেখ রাসেল এরপর ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তিনি সেখানে ভর্তি হন গণিত বিভাগের ছাত্র হিসেবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় তাঁর চিন্তাভাবনা আরও বিস্তৃত হয় এবং তিনি সমাজের বিভিন্ন সমস্যার প্রতি সচেতন হতে শুরু করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময়ে তিনি বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক আন্দোলনে অংশগ্রহণ করতেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময়ে তিনি তাঁর পিতার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রতি গভীর আগ্রহী হয়ে ওঠেন। শেখ রাসেল বুঝতে পারেন যে, শিক্ষা কেবলমাত্র পাসের জন্য নয় বরং সমাজের উন্নয়ন ও পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাঁর এই চিন্তা চেতনা তাঁকে সমাজের উন্নয়নে কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করেছিল।

সাংস্কৃতিক চর্চা ও খেলাধুলা

শেখ রাসেল ছিলেন একজন প্রতিভাবান ক্রীড়াবিদ এবং সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব। তিনি ফুটবল, ক্রিকেট ও বাস্কেটবলে অত্যন্ত দক্ষ ছিলেন। তাঁর খেলাধুলার প্রতি আগ্রহ ছিল অগাধ। ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করা, বন্ধুদের নিয়ে মাঠে খেলতে যাওয়া ছিল তাঁর রুটিনের অংশ।

এছাড়া, শেখ রাসেল ছিল একজন সংগীতপ্রেমী। তিনি গানের প্রতি গভীর ভালোবাসা পোষণ করতেন। তাঁর পছন্দের গায়ক ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও নজরুল ইসলাম। তিনি নিজেও গান গাইতেন এবং সংগীতের বিভিন্ন শাখায় প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতেন।

শেখ রাসেলের আদর্শ ও মূল্যবোধ

শেখ রাসেলের শিক্ষা জীবন থেকে যে কয়েকটি মূল্যবোধ ও আদর্শ আমরা শিখতে পারি তা হল:

  1. শিক্ষার গুরুত্ব: শেখ রাসেল তাঁর শিক্ষা জীবনে সর্বদা শিখতে চেয়েছিলেন এবং তিনি বিশ্বাস করতেন শিক্ষা হচ্ছে সমাজের উন্নয়নের মূল চাবিকাঠি।

  2. সৃজনশীলতা: তিনি সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের মাধ্যমে সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটাতেন। এটি আমাদের শেখায় যে, সৃজনশীলতা জীবনের একটি অপরিহার্য অংশ।

  3. বন্ধুত্ব ও সহযোগিতা: শেখ রাসেল তাঁর বন্ধুদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতেন এবং সহযোগিতার মাধ্যমে একে অপরকে সাহায্য করতেন। এটি আমাদের শেখায় যে, সামাজিক সম্পর্ক গড়ে তোলার মাধ্যমে জীবনে সফলতা অর্জন করা সম্ভব।

  4. অধ্যবসায়: শেখ রাসেল ছিলেন অধ্যবসায়ী। তিনি কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে তাঁর লক্ষ্য অর্জন করতে চাইতেন, যা আমাদের সকলের জন্য একটি উদাহরণ।

শেখ রাসেলের জীবন ও মৃত্যুর প্রভাব

শেখ রাসেলের জীবন ও মৃত্যুর ঘটনাটি আমাদের সমাজে গভীর প্রভাব ফেলেছে। ১৫ আগস্ট ১৯৭৫-এর কালরাত্রিতে শেখ রাসেল তাঁর পরিবারের সদস্যদের সাথে শাহাদত বরণ করেন। তাঁর মৃত্যু দেশের ইতিহাসে এক দুঃখজনক অধ্যায়। শেখ রাসেলের মৃত্যু আমাদের শেখায় যে, যুদ্ধ, হিংসা ও বিদ্বেষের কারণে কতগুলি নিরীহ প্রাণ অকালে ঝরে যেতে পারে।

শেখ রাসেলের জীবনকে স্মরণ করে আজও তাঁর শিক্ষা ও আদর্শকে অনুসরণ করার জন্য আমাদের সকলের উচিত। তাঁর নাম ও স্মৃতি বাঁচিয়ে রাখতে, আমাদের উচিত তাঁর শিক্ষা ও আদর্শকে নিজেদের জীবনে ধারণ করা।

উপসংহার

শেখ রাসেলের শিক্ষা জীবন ছিল এক অনুকরণীয় উদাহরণ। তিনি ছিলেন এক অসাধারণ প্রতিভা, যিনি সমাজের উন্নয়নে অবদান রাখতে চেয়েছিলেন। তাঁর শিক্ষা, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড এবং খেলাধুলার প্রতি আগ্রহ আমাদের সকলের জন্য একটি মডেল। শেখ রাসেল আমাদের শেখায় যে, শিক্ষা শুধুমাত্র ক্লাসরুমের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা উচিত।

আমরা যখন শেখ রাসেলের শিক্ষা জীবন নিয়ে চিন্তা করি, তখন আমাদের মনে রাখতে হবে যে, তাঁর জীবন আমাদের জন্য একটি উৎস inspiration, যা আমাদেরকে উদ্যোমী ও সৃজনশীল হতে শেখায়। শেখ রাসেলের আদর্শ ও শিক্ষা আমাদেরকে একটি উন্নত সমাজ গঠনে সাহায্য করবে, যেখানে সকলের জন্য সমান সুযোগ ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে।

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *