ইজতিনাব নামের অর্থ কি এবং ইসলাম কি বলে? (বিস্তারিত)

ইজতিনাব নামের অর্থ এবং ইসলাম কি বলে?

ইজতিনাব একটি আরবি শব্দ, যার অর্থ হলো ‘বিরত থাকা’ বা ‘পরিহার করা’। ইসলাম ধর্মে ইজতিনাবের ধারণা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি শুধুমাত্র খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেয় না, বরং ভালো কাজের দিকে অগ্রসর হওয়ারও প্রেরণা দেয়। ইসলাম ধর্মে ইজতিনাবের মূল ভিত্তি হলো আল্লাহর নির্দেশিত আইন এবং আচার-আচরণ মেনে চলা।

ইজতিনাবের গুরুত্ব

ইজতিনাবের মাধ্যমে মুসলিমরা নিজেদের আত্মশুদ্ধি অর্জন করতে পারে। এটি একজন মুসলিমের ধর্মীয় ও নৈতিক উন্নতির জন্য অপরিহার্য। ইসলামে ইজতিনাবের মাধ্যমে মানুষ খারাপ কাজ, যেমন: মিথ্যা বলা, গীবত করা, চুরি করা ইত্যাদি থেকে দূরে থাকতে উৎসাহিত হয়।

ইজতিনাবের গুরুত্ব সম্পর্কে কুরআনে উল্লেখ রয়েছে, “যারা তাদের রবের নির্দেশাবলী থেকে বিরত থাকে এবং তাদের পাপের কাজ থেকে সংযমী হয়, তাদের জন্য আল্লাহর কাছে অনেক পুরস্কার রয়েছে।” (সুরা আল-ইনসান: 31)

ইজতিনাবের প্রকারভেদ

ইজতিনাবকে সাধারণত দুই ভাগে ভাগ করা যায়:

  1. নফসি ইজতিনাব: এটি ব্যক্তিগত ইচ্ছার বিরুদ্ধে কষ্ট করা এবং খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকা। উদাহরণস্বরূপ, একজন মুসলিম যদি একটি মন্দ কাজ করতে চায় তবে সে নিজেকে সংযত করে।

  2. শারীয়াহ ইজতিনাব: এটি ইসলামী আইন এবং বিধি-বিধানের প্রতি সম্মান দেখানো। এই ধরনের ইজতিনাব মুসলিমদের জন্য বাধ্যতামূলক, যেমন: নামাজ পড়া, রোজা রাখা ইত্যাদি।

ইসলাম এবং ইজতিনাব

ইসলামে ইজতিনাবের ধারণা কেবল খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে নয়, বরং ভালো কাজের প্রতি আগ্রহী হওয়ার মাধ্যমে প্রকাশ পায়। ইসলাম ধর্ম মানুষকে সৎ, ন্যায়পরায়ণ এবং সদাচারী হওয়ার নির্দেশ দেয়।

আল-বুখারী এবং মুসলিমের হাদিসে উল্লেখ আছে যে, “যিনি আল্লাহর জন্য কিছু পরিহার করেন, আল্লাহ তাকে তার জন্য কিছু ভালো প্রদান করেন।” এটি ইজতিনাবের গুরুত্বকে নির্দেশ করে।

ইজতিনাবের ফলাফল

ইজতিনাবের ফলস্বরূপ একজন মুসলিমের জীবনে অনেক ইতিবাচক পরিবর্তন আসে। যেমন:

  • আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি: খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকলে মানুষ নিজের উপর বিশ্বাস অর্জন করে।
  • আত্মশুদ্ধি: নিজের খারাপ অভ্যাসগুলো পরিহার করে একজন মুসলিম আত্মশুদ্ধি লাভ করে।
  • সামাজিক সম্পর্কের উন্নতি: খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকলে মানুষের মধ্যে সম্পর্কের উন্নতি ঘটে এবং সামাজিক শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়।

ইজতিনাবের চর্চা

ইজতিনাবের চর্চা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একজন মুসলিমের উচিত নিয়মিত ইজতিনাবের অনুশীলন করা। এটি কিভাবে সম্ভব?

  • দোয়া করা: আল্লাহর কাছে দোয়া করা যেন তিনি আমাদের খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকার শক্তি দেন।
  • নামাজ পড়া: নিয়মিত নামাজ পড়লে একজন মুসলিম আল্লাহর নিকট বেশি কাছে পৌঁছতে পারে এবং খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকতে পারে।
  • সৎ সঙ্গী বাছাই করা: সৎ এবং ন্যায়পরায়ণ বন্ধু-বান্ধব নির্বাচন করা, যারা আমাদের ভালো কাজের জন্য উৎসাহিত করবে।

FAQs

ইজতিনাব কি শুধুমাত্র খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকা?

না, ইজতিনাব শুধু খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকা নয়, বরং ভালো কাজ করার প্রতি উৎসাহিত হওয়ারও নির্দেশ দেয়।

ইসলাম কি ইজতিনাবকে বাধ্যতামূলক করে?

হ্যাঁ, ইসলাম ধর্মে ইজতিনাবকে একটি গুরুত্বপূর্ণ নৈতিক আদর্শ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

ইজতিনাবের মাধ্যমে কি লাভ হয়?

ইজতিনাবের মাধ্যমে একজন মুসলিম আত্মবিশ্বাস, আত্মশুদ্ধি এবং সামাজিক সম্পর্কের উন্নতি লাভ করে।

কিভাবে ইজতিনাবের অনুশীলন করবেন?

নিয়মিত দোয়া করা, নামাজ পড়া এবং সৎ সঙ্গী বাছাই করা ইজতিনাবের অনুশীলনের কিছু উপায়।

ইজতিনাবের গুরুত্ব কিভাবে বোঝা যায়?

ইজতিনাবের গুরুত্ব বোঝা যায় আল্লাহর নির্দেশ এবং ইসলামী শিক্ষার মাধ্যমে, যা আমাদের খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকতে এবং ভালো কাজের দিকে এগিয়ে যেতে উৎসাহিত করে।

উপসংহার

ইজতিনাব ইসলামী শিক্ষা ও সংস্কৃতির একটি মৌলিক অংশ। এটি মুসলিমদের মাঝে নৈতিকতা ও সৎসাহস বৃদ্ধির জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যারা ইজতিনাবের চর্চা করেন, তারা আল্লাহর নিকটবর্তী হন এবং একটি সুন্দর, সৎ জীবনযাপন করেন।

ইজতিনাবের মাধ্যমে মুসলিমরা নিজেদের জীবনে শান্তি এবং সুখ খুঁজে পায় এবং তাদের সমাজে একটি ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। ইসলাম ধর্মে ইজতিনাবের ধারণা গ্রহণ করে একজন মুসলিম তার জীবনকে আরো মূল্যবান এবং অর্থপূর্ণ করতে পারে।

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *