পরিচিতি
ইশা নামটি মুসলিমদের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ নাম। এটি কোরআন ও হাদিসে উল্লেখিত নবী ইশা (আঃ) এর নাম। ইশা নামটি আরবি ভাষার একটি শব্দ এবং এর অর্থ “জীবিত” বা “বাঁচানো” হিসেবে বিবেচিত হয়। ইসলামে ইশা (আঃ) একজন গুরুত্বপূর্ণ নবী এবং ইসলামের চূড়ান্ত নবী মুহাম্মদ (সা:) এর পূর্ববর্তী নবী।
ইশা নামের অর্থ
ইশা নামের অর্থ নিয়ে ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে বেশ কিছু ব্যাখ্যা রয়েছে। এই নামটি মূলত আরবি শব্দ “عيسى” (ইসা) থেকে এসেছে, যা ইহুদি ভাষায় “জিশু” বা “যিশু” নামে পরিচিত। ইসলামে ইশা (আঃ) কে আল্লাহর নবী হিসেবে গৃহীত করা হয় এবং তিনি ইসলামের ইতিহাসে একটি বিশেষ স্থান অধিকার করেন।
ইশা (আঃ) কে আল্লাহর নবী
ইশা (আঃ) ইসলামের ২৫টি নবীর মধ্যে একজন। কোরআনে তার উল্লেখ অনেক জায়গায় এসেছে। তিনি মাতা মরিয়মের মাধ্যমে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, যিনি একটি বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ মহিলা। ইসলামে ইশা (আঃ) এর জন্ম একটি অলৌকিক ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হয়।
আল্লাহ তায়ালা বলেন:
“অবশ্যই মেরীাম বেগমকে আমি নির্বাচিত করেছি এবং তাকে পবিত্র ঘোষণা করেছি। এবং আমি তাকে তাঁর একটি সন্তান দান করেছি, যা মানবজাতির জন্য একটি নিদর্শন।” (সুরা আল-ইমরান: 42-43)
ইশা (আঃ) এর জীবন ও শিক্ষা
নবুয়ত
ইশা (আঃ) যখন নবী হিসেবে নির্বাচিত হন, তখন তিনি তাঁর জনগণের মধ্যে আল্লাহর নির্দেশাবলী প্রচার করতে শুরু করেন। তিনি আল্লাহর একত্ববাদ প্রচার করতেন এবং মানুষকে সৎকর্মের দিকে আহ্বান করতেন। তাঁর শিক্ষা ছিল মানবতার জন্য, যা আজও প্রাসঙ্গিক।
অলৌকিক ক্ষমতা
ইশা (আঃ) এর অনেক অলৌকিক ক্ষমতা ছিল, যা কোরআনে উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি অন্ধদের দৃষ্টি ফিরিয়ে দিতেন, কুষ্ঠ রোগীদের আরোগ্য দান করতেন এবং মৃতদের জীবিত করতেন। এগুলি তার নবীত্বের প্রমাণ হিসেবে গণ্য করা হয়।
“এবং আমি মাটি থেকে পাখির মত একটি সৃষ্টি করি, তারপর তাতে ফুঁ দিই এবং তা আল্লাহর অনুমতি সাপেক্ষে পাখি হয়ে যায়। এবং আমি জন্মান্ধ ও কুষ্ঠ রোগীকে সুস্থ করি এবং মৃতদের আল্লাহর অনুমতি সাপেক্ষে জীবিত করি।” (সুরা আল-ইমরান: 49)
ইসলামে ইশা (আঃ) এর স্থান
ইসলাম ধর্মে ইশা (আঃ) এর স্থান অত্যন্ত উচ্চ। তিনি মুসলিমদের বিশ্বাস অনুযায়ী, কিয়ামতের দিন পুনরুত্থান করবেন। মুসলিমদের জন্য তাঁর প্রতি বিশ্বাস রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এবং তিনি আল্লাহর নবী হিসেবে সম্মানিত।
ফিরিশতাদের সঙ্গে সম্পর্ক
ইশা (আঃ) এর নবীত্বের সময় ফিরিশতাদের সঙ্গে তাঁর বিশেষ সম্পর্ক ছিল। ইসলামী বিশ্বাস অনুযায়ী, আল্লাহ তায়ালা তাঁকে সৃষ্টির শুরু থেকে রক্ষা করেছেন এবং তাঁর জন্য বিশেষ নির্দেশনা প্রদান করেছেন।
ইশা (আঃ) এবং মুসলিম সমাজ
ইশা (আঃ) এর শিক্ষা মুসলিম সমাজে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর শিক্ষা আজও মুসলিমদের জন্য একটি আদর্শ হিসেবে কাজ করে। তিনি যেভাবে মানবতার সেবা করেছেন এবং আল্লাহর পথে চলেছেন, তা সব মুসলিমের জন্য একটি উদাহরণ।
নৈতিক শিক্ষা
ইশা (আঃ) এর নৈতিক শিক্ষা মানুষের মধ্যে সদাচার, আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস, এবং মানবতার সেবা করার গুরুত্ব সম্পর্কে। তিনি মানব জীবনের মূল্য বোঝাতে এবং সৎকর্মের প্রতি উৎসাহিত করতে চেষ্টা করেছেন।
উপসংহার
ইশা নামের অর্থ এবং ইসলামে তাঁর স্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মুসলিম সমাজে ইশা (আঃ) এর শিক্ষা, অলৌকিকতা এবং জীবনের উদাহরণ আজও প্রাসঙ্গিক। তাঁর নামের অর্থ “জীবিত” হওয়া, আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, আল্লাহর পথে চলা এবং মানবতার সেবায় নিয়োজিত থাকা আমাদের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের উচিত ইশা (আঃ) এর জীবন থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা এবং আমাদের নৈতিক জীবন গঠন করা।
আল্লাহ আমাদেরকে সঠিক পথে পরিচালিত করুন এবং ইশা (আঃ) এর শিক্ষা আমাদের জীবনে প্রভাবিত করুক। আমিন।